নববর্ষ উদযাপন, ২১শে এপ্রিল ২০২৪ উপলক্ষে বিশেষ প্রতিবেদন, লেখনী : সমর দাস পানভেল বেঙ্গলি সংস্কৃতিক সংস্থা ২৩শে এপ্রিল ২০২৪ ---------------- কালকে থেকেই লিখব লিখব করছি। এই কথাটা যে, শ্রী আশীষ সাহা দার মধ্যস্থতায় অতি সুন্দর একটা অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করা সম্ভব হয়েছে। কর্মক্ষেত্রের পেশা সম্বন্ধীয় কর্তব্যের ভারে যখন কচিকাঁচারা হাত নামিয়ে দিল, তখন এই বর্ষিয়ান মানুষটি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এগিয়ে এসে দায়িত্বভার নিলেন। অনুষ্ঠান সাজালেন নিজের মতো করে। সম্পূর্ণভাবে in house program, কোন পেশাদার শিল্পী ছিলেন না। কিন্তু মনোরঞ্জন-মিটারের কাঁটা সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছিল। অনুষ্ঠানে তবলার অভাব ছিল , তা আশীষ দা বুঝতেই দেননি। এবং সবচেয়ে বড় কথা কোনও অংশগ্রহণকারীকে অখুশি রাখা হয়নি। সবাই সময় মতো যে যার ভূমিকা রেখে গেছে। অনুষ্ঠানের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত দর্শক তার আপন আপন সিট আঁকড়ে বসে ছিল। এতটাই মনোগ্রাহী ছিল এই রবিবারের নববর্ষ-বরণ অনুষ্ঠান। পর্দার পেছনে আরো কিছু মানুষ আছেন, যারা বিগত ১০ - ১২ দিন ধরে পরিকল্পনা করে গেছেন। তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি নাম, শৈবাল দা। ঘন্টার পর ঘন্টা মিটিংয়ে বসতে যার ক্লান্তি নেই, a man with endless patience for perfect planning and proper documentation. আরেকটি নাম না করলে হয়তো আমার এই প্রতিবেদন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না, তিনি হলেন আশীষ ঈশোর দা। প্রসঙ্গত বলে রাখি, পুনর্নির্মাণ এবং সংস্কারের জন্য, পানভেল ওএনজিসি কলোনির আম্বেদকর ভবন আপাতত জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমত অবস্থায় বেঙ্গলি সংস্থার নববর্ষ উৎসব ঘোর তমসায় নিমজ্জ ছিল। বহু অন্তরায় কাটিয়ে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সম্মতি জোগাড় করে, উৎসবের মেজাজ প্রকাশ্য দিবালোকে এনে দিলেন এই আশীষ ঈশোর দা। তার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার সেই নেপথ্য কাহিনী যা আমরা কেউ জানিনা বা তিনিও প্রচার করেন না, যার ফলস্বরূপ একুশে এপ্রিল ২০২৪ রবিবার নববর্ষ উৎসব উদযাপনের জন্য আমরা পেলাম একটা ঠিকানা, একটা সুসজ্জিত গ্যালারি, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত স্বয়ংসম্পূর্ণ এক প্রেক্ষাগৃহ আর নৈশ ভোজের জন্য সুসজ্জিত ডাইনিং হল, রান্নাঘর সমেত। সমস্ত টাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে তার ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক আর পানভেল বেঙ্গলি সংস্থার বিগত ৩৪ বছরের সুনাম এর ইতিহাস। মূল অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে ফিরে আসি আবার। নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে অনুষ্ঠান শুরু হলেও ছোট ছোট শিশুদের উদ্দীপনা আর প্রস্তুতি দেখে এবং শুনে আমি তো তাজ্জব!! আয়ুষ, আর্য, ঋদ্ধ, মৌলি, Facial expression এর সাথে একটা গান করা বা কবিতা বলা এদের কাছে নস্যি। পুজোর সময় এরা অভিনয় ও করে থাকে। অবশ্যই অন্তরালে এদের মায়েদের ভূমিকার প্রশংসা করতে হয়। আর কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের সংস্কৃতিক সংস্থাকে। প্রতিটি সদস্য এবং তাদের পরিবারের সার্বিক উন্নতির স্বার্থে এই সংস্থা সর্বদা তার সংস্কৃতিক প্লাটফর্ম উন্মুক্ত করে রেখেছে। দেখলাম শিশুরা কি সুন্দর stage free, তাদের প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে পানভেল বেঙ্গলি সংস্থার অবদান কোন মূল্য দিয়ে বিচার করা যায় না। কচি কাঁচা দের পর আমাদের সিনিয়র মেয়েরা যে উচ্চতার নৃত্য প্রদর্শন করলো এক কথায় তা অনবদ্য। নিকিতা, রিক্তা outstanding, রুমা আর বিদিশা তাদের নৃত্যশৈলী দেখিয়ে দর্শকদের অবাক করল । তাদের প্রতিভা সম্পর্কে পারমিতা বৌদি এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে দুই দিনের অভ্যাসে নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ সফল মঞ্চস্থ করে গেলেন নৃত্যের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে আরো শুনতে পেলাম শ্রীমতি নিবেদিতা বিশ্বাসের স্বরচিত কবিতা, শ্রীমতি গৌরী সেনের কন্ঠে লোক সংগীত, শ্রীমতি মৌসুমী করঞ্জয়ী শোনালেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া দুটি কালজয়ী গান, উৎপল কয়াল গাইলেন -আজ এই দিনটাকে সোনার খাতায় লিখে রাখো। এরই মাঝে কর্মকর্তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে দেখলাম। এই সংস্থার সদস্য, যারা বিগত এক বছরে কর্ম-অবসর নিয়েছেন, আর যারা চলতি বছরে চাকুরী সূত্রে ট্রান্সফার নিয়ে অন্যত্র যাচ্ছে তাদের সম্মান জ্ঞাপন করা হলো। বিশেষ অতিথি হিসেবে এসেছিলেন IPEOT Phase-।। ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক শ্রী মিশ্র সাহেব এবং তাঁর স্ত্রী, তাঁদেরকেও যথোচিত সম্মানের সাথে আপ্যায়ন করা হলো। এরপর মঞ্চে এলেন শ্রীমতি মৃন্ময়ী রায় তাকে সহযোগিতা করলেন শ্রী আশীষ সাহা নিজে। প্রথমে নজরুল গীতি পরে তাদের দ্বৈত উপস্থাপনা, মনোরঞ্জনে নতুন মাত্রা এনে দিল। সে যে কি ঐকতান ! যেকোনো পেশাদার শিল্পী হার মানবে। দর্শকের করতালিতে প্রেক্ষাগৃহ মুখর হল। সবশেষে আমি মানে সমর দাস মঞ্চে উঠলাম। সলিল চৌধুরীর সুরে শ্যামল মিত্রের গাওয়া, ষাট এবং সত্তর দশকের কিছু জনপ্রিয়গান Karaoke track এর মাধ্যমে শোনালাম । ভাষ্য পাঠে সহযোগিতা করলেন শ্রীমতি মৌসুমি করঞ্জয়ী। দর্শক-শ্রোতা করতালি দিয়ে আশীর্বাদ করলেন। শুরুতে যে কথা বলছিলাম, আশীষ সাহা-দার দূরদর্শিতার কথা। শাস্ত্রীয় সংগীতে যেমন আলাপ দিয়ে মন্দ্র গতিতে শুরু হয়ে, পর্যায়ক্রমে ঝালা অর্থাৎ দ্রুত-লয়ে রাগ রাগিনী সমাপ্ত হয়, তেমনি ছিল সমগ্র এই অনুষ্ঠানের গতি প্রকৃতি। অগণিত অনুষ্ঠান সঞ্চালনা, নাটকে অভিনয়লব্ধ আশীষ দার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর দক্ষতার প্রমাণ পেল দর্শক। কাঁটায় কাঁটায় দশটা তিরিশ অনুষ্ঠান শেষ হলো। আর আমার আফসোস রয়ে গেল এই ভেবে যে আশীষ দার অনুরোধ আমি রাখতে পারিনি। শ্যামল মিত্রের গাওয়া বনপলাশীর পদাবলীর গান ওনার পছন্দের তালিকায় ছিল। আরো কিছু কর্মকর্তা যাদের কথা না বললে আমার প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ রয়ে যায়, তারা হলেন শ্রী অভিনন্দন ঘোষ, অজিত মন্ডল, সুখেন দত্ত, অভিজিৎ গুপ্ত, রাজীব দাস, রাজীব রায়, প্রেমাংশু নন্দী, অচিন্ত্য মন্ডল এবং আরো অনেকে। অনুষ্ঠান শেষে মাংস ভাত আর মিষ্টিমুখ করে একে অন্যকে বিদায় জানালাম। " *বিস্তীর্ণ এ বিশ্বভূমি সীমা তার নাই, কত দেশ আছে! কোথা হতে কয় জনা হেথা এক ঠাঁই কেন মিলিয়াছে? করো সুখী, থাকো সুখে প্রীতিভরে হাসিমুখে পুষ্পগুচ্ছ যেন এক গাছে-- তা যদি না পার চিরদিন, একদিন এসো তবু কাছে।* "